• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

নির্বাচন

নড়াইলের কালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪

নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির পক্ষ অবলম্বন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শংকায় প্রার্থী ও ভোটাররা

  • ''
  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০২৪

নড়াইল প্রতিনিধি:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ৫জন। তারা সকলেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতা। এ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতসহ অন্যকোনো দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। তারপরও খোদ আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা নির্বাচন সুষ্ঠু শান্কিপূর্ণ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন। ইতিমধ্যে নড়াইলের ১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীমূর রহমান খান এরর্ পক্ষ অবলম্বন করায় বাকি প্রার্থীরা উৎকণ্ঠায় পড়ে গেছেন। তারা নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে না বলেই মনে করছেন। তারা নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসকের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে,কালিয়া উপজেলা নির্বাচনে ৫জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৮২ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৯৭হাজার ২০৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৭৮জন ও মহিলা ভোটার ৯৭০৩১জন। আগামী ৮ মে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কালিয়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান কৃঞ্চপদ ঘোষ ( মোটর সাইকেল) কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডঃ মাহমুদুর হাসান কায়েস (ঘোড়া),সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান খান ( চিংড়িমাছ), এস এম হারুনার রশীদ (আনারস),ও এস এম নাজমুল হক প্রিন্স (দোয়াত কলম) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী কৃঞ্চপদ ঘোষ বলেন,নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য বি,এম কবিরু হক মুক্তি চেয়ারম্যান প্রার্থী খান শামিমুর রহমান ওছি খানের পক্ষ নিয়ে খুলনায় তার নিজের বাড়ীতে বসে নির্বাচনের কলকাঠি নাড়ছেন। আমার পক্ষে যারা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণাসহ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন এমপি মহোদয় মুঠোফোনে তাদের খুলনার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ওছি খানের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে আমাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ক্ষতিগ্রস্থসহ নানান অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি বলেন,বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।

দোয়াত কলমের প্রতীকের প্রার্থী এস এম নাজমুল হক প্রিন্স বলেন,এমপির কথায় কালিয়ায় সব কিছু চলে। তার বিপক্ষে কেউ কোন কথা বললে তার নিস্তার নেই। তার ভয়ে কোন মানুষ কথা বলতে পারে না। আমার পক্ষে যারা কাজ করছিলো তাদেরকে ফোনে খুলনায় ডেকে নিয়ে এক প্রকার থ্রেট দিয়েছে। তাদের চেয়ারম্যান পদে ওছি খার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনসহ জেলা প্রশাসনের সদয় দৃস্টি কামনা করেছেন।

আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন এস এম হারুনার রশীদ। জানতে চাইলে তিনিও এমপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।তিনি বলেন,এলাকায় যারা ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের হাতে বেশ কিছু টাকাও ধরিয়ে দিচ্ছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা বেশি উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার খাশিয়াল,সালামাবাদ,বড়নাল,ইলিয়াছাবাদ,হামিদপুর চাচুড়ি পুরুলিয়া,বাবরাহাচলা ইউনিয়নে ভোটারদের মধ্যে উৎকণ্ঠা প্রবল। কারণ বিগত নির্বাচনের আগে-পরে কালিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরও সংখ্যালঘুরা নির্বাচনের পর তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের আশঙ্কা করছেন। খাশিয়াল ইউনিয়নের পাটনা,চোরখালি,শিবানন্দপুর,সুরিগাতি,তালবাড়িয়া,বি-পাটনা ও ব্রাহ্মণ পাটনা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন জানায় এ ইউনিয়নেই কালিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী খান শামীম রহমান ওছি খানের বাড়ি। তিনি নিজেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী। ফলে আমাদের প্রকাশ্য কিছু বলা বা করা সম্ভব না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন মাতব্বর বলেন,আমরা নিরুপায়। এমপি মহোদয় আমাদের ডাকলে না যেয়ে উপায় নেই। তিনি যা বলবেন আমাদের তাই শুনতে হবে। তারা আরো বলেন, না এমপি আমাদের কোন টাকা দেননি । যারা টাকার কথা বলেছেন ভুল বলেছেন। তবে হ্যা এমপি মহোদয় ওছি খানের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ করেছেন। তারা আরো বলেন,প্রায় প্রতিদিনই তার খুলনার বাসায় দলে দলে লোক যাচ্ছেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক নড়াইল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। নেই নির্বাচনী ব্যবস্থা। নেই আইনের শাসন। নেই বিচার ব্যবস্থা। দেশে এখন চলছে আওয়ামীলীগের বাকশালী শাসন ব্যবস্থা। একদলীয় পাতানো নির্বাচনে বিএনপি এর আগে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অংশ নেয়নি। এবার পাতানো উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি যাবে না। এ কারণে নড়াইলের তিনটি উপজেলার কোথাও আমরা প্রার্থী দেইনি।

এ ব্যাপারে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক মুক্তি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন কালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে, ৫জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন তারা সবাই আওয়ামীলগ পরিবারের সদস্য । সুতরাং তারা সবাই আমার লোক। কাকে রেখে কার পক্ষে কাজ করতে বলবো জনগণকে। তিনি আরো বলেন,খেয়াঘাটে এসে যার যার গন্তব্যে যাবার জন্য একই নৌকায় সবাই ওঠেন। নৌকা থেকে নেমে কে কোথায় যাবেন কেউই বলতে পারেন না। আওয়ামীলীগ এমনই একটা রাজনৈতিক দল যেখানে নেতাকর্মীর অভাব নেই। তিনি আসন্ন উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে বলে ও মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads